পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ৯ টি উপায় জেনে নিন
ভালো ছাত্র বা ছাত্রী হতে চাইলে আমাদেরকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে সবার আগে। এটা ছাড়া ভালো ছাত্র-ছাত্রী হওয়ার কোন বিকল্প উপায় নেই। কিছু পদ্ধতি জেনে রাখা উচিত সবার।

বর্তমানে প্রতিটি বাবা মা চান তার ছেলে মেয়ে যেন সবচেয়ে ভাল পরাশোনা করে। তার জন্য প্রত্যেক বাবা মা অনেক শ্রমও ব্যয় করে থাকেন।
তারা চান যেন তার ছেলে মেয়ে সবচেয়ে মানসম্মত স্কুলে পরাশোনা করুক। প্রতিটি জেলায় কিন্তু কোন না কোন ভাল স্কুল আছে।
সে স্কুলে মনে করুন কমপক্ষে প্রতি বছর ১০০ (একশত) শিক্ষার্থী ভর্তি হয় আবার ১০০ (একশত) শিক্ষার্থী পাশ করে সেখান থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়।
এ ভাল স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য ছাত্র ছাত্রী কে মেধাবী হতে হয়। আবার বাবা মা কে অর্থ ব্যয় করতে হয়।
আমরা একটা অনুমান করি যে, বাংলাদেশে ক্যাডেট সহ ২০০ (দুইশত) ভাল স্কুল আছে।
এখানে প্রতি স্কুলে থেকে ২০০ (দুইশত) শিক্ষার্থী প্রতি বছর পাশ করে থাকলে ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) মেধাবি শিক্ষার্থী আমাদের সামনে আসার কথা। কিন্তু তা হয় না।
২০১০ থেকে ২০১৮ এক গবেষণায় দেখা যায় যে, ভাল স্কুলে সচেতন বাবা মায়ের ছেলে মেয়ে থেকে অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত বাবা মায়ের ছেলে মেয়েরা ভবিষ্যৎ জীবনে বেশি উচ্চ শিক্ষিত হচ্ছে।
তাহলে প্রশ্ন জাগে যে, ভাল স্কুলে পড়াশোনা করে কি কোন লাভ নেই।
তাহলে সমাধান টি কোথায়।
এর সমাধানের মধ্যে আছে শিক্ষার্থীর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ, ভাল শিক্ষক শিক্ষিকার প্রচেষ্ঠা, বাবা মায়ের সার্বিক সহায়তা, আর পরাশোনা মনোযোগী হওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ।
নিচে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ৯টি উপায় দেওয়া হল
১. কিসের জন্য সে পড়াশোনা করবে
পড়াশোনা করে জ্ঞান অর্জন করা যায়। ভাল খারাপ এর মধ্যে পার্থক্য করা যায়। নিজের বিবেক জাগ্রত থাকে। যুগ অনুযায়ী নিজেকে খাপ খাইয়ে চলা যায়।
একজন ডাক্তার তার জীবনের অনেক সময় পড়াশোনা করে ব্যয় করে থাকে। যখন আমরা ভাল কোন ডাক্তার এর কাছে যাই তখন আমার মনে হয় আমি নিজে ও ডাক্তার হওয়ার জন্য চেষ্ঠা করি।
আবার BCS CADRE এর কাছে যখন কোন বিষয় সত্যায়িত করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি তখনও মনে হয় ভালো ভাবে চেষ্ঠা করি দেখি হয় কিনা।
তাই নিজেকে সামনে এগিয়ে নিতে চাইলে পড়াশোনর কোন বিকল্প নাই।
আরো পড়ুন >> মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইন আয় করার ৭টি উপায়
২. পড়াশোনা ছাড়া কি সমাজে বড় হওয়া যায়
আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সভ্যতার সাথে। আগে একটা পরিবারে যদি মোট ভাই বোন ৮ জন থাকতো সেখানে দুই তিন উচ্চ শিক্ষিত হয়।
বাকী সবার বিদেশ কিংবা কৃষি কাজ করে জীবন চলে যেত। আজ আধুনিক বিশ্বে দেখা যায় যে, যে লোক এশিয়ার কোন দেশে গিয়ে গড়ে ৩০,০০০ টাকা ইনকাম করতো, এখন তা দেশে ইনকাম করা যায়।
এখন বিশ্ব হয়েছে একটি গ্রামের মত। আপনি যদি চিন্তা করেন পড়াশোনা ছাড়া পৃথীবিতে এমনি চলে যাবেন এখন আর সেই যুগ নাই।
তাই পড়াশোনায় মনোযোগ বসার জন্য মনে হয় না এর চেয়ে ভাল উদাহরণ আর হয়।
৩. বর্তমান বিশ্বে পড়াশোনা কি প্রয়োজন
তথ্য প্রযুক্তির যুগে আপনি ঘরে বসে আপনার ৯০% তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। ভাবুন তো দিন দিন বিশ্ব কতই না এগিয়ে যাচ্ছে।
সবই হয়ে যাচ্ছে মুঠো ফোনের মধ্যে। আপনার বন্ধু বান্ধবীরা যদি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তখন চাইলেও আপনি তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন না।
জীবন মানুষকে বার বার সুযোগ দেয় না। পড়ার সময় পড়ে মানুষ কোন ভাবে অবহেলিত হয় না।
আজ যারা অশিক্ষিত তাদের কে জিজ্ঞাস করলে তারা বলে পড়াশোনা একটি অমূল্য ধন।
অবহেলার মাধ্যমে কেউ পড়াশোনা না করলে চোখের জলে তা মূল্য দিতে হয়।
৪. নিজেকে এগিয়ে রাখার জন্য পড়াশোনা কি দরকার
আমাদের পাশের বাসায় একজন A+ পেয়েছে। তাকে নিয়ে অনেকের চিন্তা যে, সে যেন ভাল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়।
তার ভাল এবং সাভাবিক কাজ কর্ম এখন অনেকের জন্য অনুকরনীয়। ভাবুন তো আপনি কোন কাজ করে সকলে কাছে সহজে অনুকরনীয় হতে পারবেন ?
আপনার আশে পাশে কেউ যদি মেডিকেল, বুয়েট অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তথন খাবার টেবিলে বাবর পেরা। আর কোন অনুষ্ঠানে যে যদি আসে তাকে নিয়ে আর কত কি।
৫. জ্ঞানী হতে চাই
জ্ঞান এর মত অমূল্য সম্পদ পৃথিবীতে আর কোন সম্পদ নেই। মণীষীরা বলে সম্পদ যে কোন সময় হারিয়ে যেতে পারে, চুরি হয়ে যেতে পারে কিন্তু জ্ঞান তা হয় না।
পড়াশোনা করলেই জ্ঞানী হওয়া যায় না। আমাদেরকে অবশ্যই জ্ঞানী হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। আর জ্ঞানীয় হওয়ার আগ্রহটা আমাদেরকে মনোযোগী করে তুলবে।
৬. যারা পড়াশোনা কে লক্ষ্য নিয়ে চলে তাদের সাথে চলা
আমার সাথের বন্ধুরা দিনে পড়ার সময় পড়া আর খেলার সময় খেলো এ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তখন আমি অণ্য বন্ধুদের সাথে অবসর সময় কাটাই।
কিছু দিন পড়ে দেখি আমার পড়ার টেবিরের চেয়ে অন্য ভাবে সময় কাটাতে ভাল লাগে।আবার আগের বন্ধুদের সাথে যখন সময় করি তাদের কথা বলার সময় দেখি আমার পড়ার ইচ্ছ বেড়ে যায়।
মনে হয় কেন অবসর সময় কাটিয়ে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট করি।এজন্য পড়াশোনা করা বন্ধুদের সাথে থাকলে পড়ার আগ্রহটা জেগে উঠে।
৭. পড়াশোনা কে সম্পূর্ণ বুঝে পড়া
একসময় একজনের ৫টি অংক করতে ৩ বা ৪ ঘন্টা লাগত। কিছুদিন আবার ভুলে যেত। তার কারণ হলো সে অংকগুলো মুখস্ত করত।
যদি সে অংকের নিয়ম শিখে বুজে করত তাহলে তার সময় ও আগ্রহ কখনই নষ্ট হতো না। বিজ্ঞান কিছু অধ্যায় আছে যে গুলো বুজে পড়লে পড়ার আগ্রহ বেড়ে ও সহজ হয়।
তাই পড়ার মূল বিষয় হলো কখনই না বুজে পড়া ঠিক নয়। এতে করে মন ও সময় নষ্ঠ দুটোই অপব্যয় হয়।
৮. মোট সময়কে ভাগ করে বিরতি দিয়ে পড়া
পরীক্ষার আগে 4g/ 5g Speed পড়া আর পরীক্ষার হলে কলম কামরানো অনেকের একটি জাতীয় রোগ।
আপনার মোট পড়ার সময় কে একটি অংশে ভাগ করে বিরতি দিয়ে পড়লে দেখবেন কত ভাল মনোযোগ বসে পড়াব টেবিলে।আর সেই পড়া বেশি দিনও মনে থাকে। সহজে মনোযোগ নষ্ঠ হয় না।
৯. পড়ার আগে অপ্রয়োজনীয় জিনিস বা কোন কাজ যেন না থাকে
অনেক কে দেখবেন পড়ার সময় টেবিলে রাখা বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে খেলা করে। ১ ঘন্টা পর তার ২০ লাইন মুুখস্ত হয়ার কথা থাকলে সেখানে তা না হয়ে কম হয়।
তাই ভাবুন পড়ার সময় কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিস যেন না থাকে। কোন কাজ যদি Painding থাকে দেখবেন পড়ার মন পড়ায় নাই।
আজ তো মহা সমস্যা (কার মতে – জাতীয় সমস্যা) হলো Mobile. এর মাধ্যমে ৭০% শিক্ষার্থী জড়ে যাচ্ছে উচ্চ শিক্ষা থেকে (যারা psc, jsc তে ভাল ফলাফল আর ssc তে Mobile পেয়ে ফলাফল Down হওয়া তে ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারে নাা আর পিছিয়ে যাচ্ছে উচ্চ শিক্ষা থেকে)।
শেষ কথা
পড়াশোনায় মনোযোগ বসানো জন্য বিভিন্ন সময় বিজ্ঞানিরা নানা রকম গবেষণা করে অনেক আধুনিক উপায় বের করেছে।
তারা পড়াশোনা করার জন্য পযার্প্ত ঘুম, বাজে অভ্যাস থেকে দুরে, কম আলোতে যেন না পড়ে, মনের বিরুদ্ধে জোর করে না পড়া, অসময়ে পড়তে না বসা, যার যার ধর্মীয় নিয়ম মেনে চলা কে প্রধান বলেছেন।
পড়াশোনার জন্য যতই গবেষণাই হোক না কেন, নিজের মধ্যে পড়াশোনা করে বড় হওয়া ইচ্ছা না থাকলে সবই বিথা।
আমরা অনেক কৃষকের ছেলে মেয়ে, রিক্সাওয়ালার ছেলে মেয়ে যাদের ঘরে আলো ছিল না। তাই বলে তারা থেমে না থেকে এগিয়ে গিয়েছে।
One Comment on “পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ৯ টি উপায় জেনে নিন”